বাড়ি ফেরার হিড়িক শুরু হয়েছে আশপাশের দোকানে। জিনিস গুছোচ্ছে ফুটপাতের ফেরিওয়ালারা।
চৈত্র মাস। বেশ গরম পড়েছে। লোকটা তাই কলারওয়ালা নীল রঙের বাহারি গেঞ্জিটার গলা খুলে রেখেছে। ঝুলিয়ে পড়েছে ব্লু জিন্স এর প্যান্টের ওপর। মোজা ছাড়াই পড়েছে সাদা ফোম-রাবারের জুতো। হাঁটছে হনহনিয়ে। মাঝে মাঝে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছে দু’পাশের দোকানের কাচের শোকেচ কিন্তু থামছে না। থামল নিউ রোড বীরের গাঙ্গুলির রোডের মোড়ে। জহরতের দোকানের সামনে ডায়মন্ড এক্সচেঞ্জ। হিরে কেনাবেচার একবড় দোকান কলকাতায় আর দুটি নেই। লোকটা দাঁড়িয়েছে কাচের শোকেসের ঠিক সামনে। ঝট করে দেখে নিল আশপাশে, তারপরেই হাতের ছড়ির গোল হাতল দিয়ে ধাঁই করে মারল কাচের শোকেসে। ঝনঝন শব্দে কাচ যখন খানখান হচ্ছে, একই সঙ্গে বিপদ সংকেতের ঘন্টাও বেজে উঠছে। এদিকে-ওদিকে লোক দাঁড়িয়ে গেছে। তারা থ। লোকটা কিন্তু হাত গলিয়ে দিয়েছে ভাঙা শোকেসের মধ্যে। পেছন ফিরে পালাতে গিয়েই পেল বাধা। মোড় ফিরে পালাতে গিয়েই পেল বাধা। মোড় ঘুরে তেড়ে আসছে ট্রাফিক সার্জেন্ট। কোমরের খাপ থেকে টেনে বের করেছে রিভলভার। চেঁচিয়ে উঠেছে পেছনে এসেই। ঘুরে দাঁড়াল হিরেচোর। সার্জেন্টের মাথা টিপ করে চালাল ছড়ির হাতল। গরমের মধ্যে হেলমেট খুলে রেখেছিল সার্জেন্ট। ভারী হাতলটা পড়ল রগের ওপর। চোখের সামনে দেখলো আলোর ঝলকানি।চোট লেগেছে ব্রেনে। লুটিয়ে পড়ল ফুটপাথে।
দোকানের দরজায় এসে দাঁড়িয়েছে মস্ত চেহারার এক পুরুষমূর্তি। পরনে সাদা কুর্তা আর পায়জামা। চেঁচাচ্ছে গলার শির তুলে, “চোর! চোর!”
হিরেচোর ততক্ষনে পাশের গলিতে ঢুকে পড়েছে। দৌড়াচ্ছে পাকা দৌড়বাজের মতো, এখনই উধাও হয়ে যাবে গলিঘুঁজির মধ্যে। এই গলির মুখেই হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল একদল লোক। এদের মধ্যে থেকে ছিটকে গেল একটি ছেলে। বয়স বড়জোর পঁচিশ। গায়ে জিন্স-এর জ্যাকেট ও প্যান্ট। এর পায়ে যেন ডানা লাগানো আছে। নাহাল ধরে ফেলল হিরেচোরের। দু’জনেই গড়িয়ে গেল রাস্তার ওপর।
এই সময়ে ছড়ির হাতল নেমে এসেছিল ছেলেটার মাথা টিপ করে। বজ্র-আলিঙ্গন একটু শিথিল হয়েছিল এই কারনই। সড়াত করে পিছলে গিয়ে ফের টেনে দৌড় লাগিয়েছিল হিরেচোর। ততক্ষণে হইহই করে তেড়ে এসেছে আর অনেকে। সকলের আগে দু’জন ট্রাফিক পুলিশ।
একটাই কথা বলেছিল হিরেচোর, “হিরে নেই আমার কাছে।” না, হিরে পাওয়া যায়নি তার পকেটে। ভাঙা শোকেসের প্রায় সব হিরেই সে হাতিয়েছিল, চারটে হিরের আংটি আর দুটো ছোট-ছোট হিরে ছাড়া। হিরে নিয়েই তো সে দৌড়েছিল অত লোকের সামনে দিয়ে। তবে কি ঝটপাটি করার সময়ে হিরে চালান করেছে ছেলেটার পকেটে?কে না জানে, দোসর নিয়ে ঘোরে ছিনতাইবাজরা। বিপদ দেখলেই চোরাই জিনিসপত্র চালান করে সঙ্গীদের কাছে। কিন্তু ছেলেটাকেও সার্চ
করে পাওয়া গেল না হিরে, একই সঙ্গে দু’জনকে আনা হয়েছিল থানায়।
রুপোর হাতলওলা ছাড়ির মধ্যে নেই তো? না, সেখানেও নাই। একেবারেই নিরেট ছড়ি। রুপোর হাতলও নিরেট। তবে কি রাস্তায় ঠিকড়ে পড়েছে? জনতা কুড়িয়ে নিয়েছে? অসম্ভব। ট্রফিক পুলিশ দু’জন সকলের আগে দৌড়েছিল। রাস্তায় ছড়ানো হিরে লুট শুরু হলে হট্টগোলে তাদের টনক নড়ত। রাস্তাতেও পড়ে নেই হিরে। তন্নতন্ন করে দেখার পরেও পাওয়া যায়নি। দোকানের দরজায় দাঁড়িয়ে যিনি ‘চোর চোর’ বলে চেঁচিয়েছিলেন, তিনিই দোকানটার খোদ মালিক। সেই রাতে থানায় তিনিও গিয়েছিলেন।
বলেছিলেন,“আটটা বাজতেই রোলিং শাটার নামিয়েছি আমি নিজে। তারপরেই শোকেস থেকে হিরেগুলো তুলে ভল্টে রাখবার জন্য যেই ঘুরেছি, অমনই ভাঙল কাঁচ।” বড়বাবু বলেছিলেন, “কত টাকার হিরে গেল?” “আন্দাজ হিসেবে এক কোটি তো হবেই। ঝামেলা হবে হিরের বকলসটা নিয়ে।”
“হিরের বকলস!”
“আজ্ঞে। কুকুর পোষার শখ ছিল ময়নাগড়ের মহারাজার। সেরা কুকুরকে হিরের বকলস পরিয়ে রাখতেন। রাজত্ব গেছে-তাঁর ছেলে ঠাটবাট বজায় রাখার জন্য এনেছিল বেচবার জন্য। আমি বলেছিলাম, রেখে যান। বিক্রি হলে দাম পাবেন, আমাকে কমিশন দেবেন। ছোকরা তো এখন আমাকে ছাড়বে না। যেভাবেই পারেন, হিরে উদ্ধার করে দিন।” মাথা চুলকে বড়বাবু বলেছিলেন, “কিন্তু অত হিরে গেল কোথায়? নিশ্চয় হাওয়ায় মিলিয়ে যায় নি”। পরের দিন সকালে ইন্দ্রনাথের বৈঠকখানায় বসে বললেন খোদ মালিক, যাঁর নামের মধ্যেও রয়েছে জহরতের গন্ধ।
নাম তার জহর দাশ। দিব্যি পেটাই চেহারা। লম্বায় ছ’ফুট তো বটেই। গায়ের রং আর ফেসকাটিং সাহেবদের মতো। খালি যা মাথাজোড়া বিশাল টাক। যে-বাঙালি ধুতি-পাঞ্জাবি পরে, ইন্দ্রনাথ তাকে একটু বেশি খাতির করে। জহর দাসের হিরের বোতাম, অর্গান্ডির পাঞ্জাবি আর চুনোট করা কোঁচার দিকে তাকিয়ে তািই বলেছিল, “ফাইন! আপনার রুচি আছে।”
“তা আছে। অনেক কিছুর। দেখতে যদি চান, বাড়ি আসুন। আপনার সেই লেখক বন্ধুকেও নিয়ে আসুন। কিন্তু ভাই, বকরসটাকেও উদ্ধার করে দিন। পুলিশ দিয়ে হবে না। অত হিরে কি ভ্যানিশড্ হয়ে গেল? হোপলেস! সামান্য এই রহস্যের সমাধান করতে পারছেন না! তাই দৌড়ে এলাম। প্লিজ হেল্প।”
হিরে চুরির কাহিনী শুনে ইন্দ্রনাথ নিজেও মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়েছিল। কিন্তু জহর দাশকে তো আর না বলা যায় না। তাই বলেছিল, “ভাবতে সময় দিন।”
- “তা হলে চলুন, আমার বাড়িতে চলুন, মাথা সাফ হয়ে যাবে।”
ইন্দ্রনাথ আমাকে বালিগঞ্জ থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল জহর দাশের পেল্লায় গাড়িতেই। তিনি থাকেন আহিরিটোলার একটা বিরাট বাড়িতে। রাজবাড়ি বললেই বলে। বৈঠকখানায় বনে আগে নিজের কাহিনী ফলাও করে বললেন জহর দাশ। হিরে কেনাবেচা সূত্রে পৃথিবীভ্রমণ তাঁর কাছে টালা থেকে টালিগঞ্জ যাওয়ার ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছি। এই তো সেদিন ঘুর এলেন সাউথ আমেরিকা। ভেনিজুয়েলার এক কিউরেটরের কাছ থেকে কিনলেন একটা রক্তমুখী নীলা।
“রক্তমুখী নীলা!” মুখ ফসকে বলে ফেলেছিলাম আমি, “সে তো সর্বনেশে নীলা।”
“আজ্ঞে,” টাকে হাত বুলাতে-বুলাতে অবজ্ঞার সুরে বললেন জহর দাশ, খুবই সর্বনেশে। যা শুনে কিনেছিলাম, তা যদি শত্যি হয়, তা হলে সাংঘাতিক সর্বনেশে।”
“কী শুনে কিনলেন?”
“আজটেকদের নাম নিশ্চয় শুনেচেন?”
“শুনবো না কেন?” আহত কন্ঠে বলেছিলাম, “স্প্যানিয়ার্ডদের হামলার আগে মেক্সিকোয় যারা সবচেয়ে প্রবল জাত ছিল।”
“রাগ করলেন?”
“না, করিনি।”
“তা হলে শুনুন। আজটেকদের বিশ্বাস ছিল, সূর্যনাকি রোজ রাতে মারা যায়- নররক্ত না পেলে পরের দিন সকালে ওঠে না। তাই বছরে ১৫০০০ নরবলি দিত রক্তেলোলুপ সূর্যদেবতাকে ঠান্ডা রাখার জন্য। বেশির ভাগ যুদ্ধবন্দী। আমি এই মন্দিরগুলোর কী নাম দিয়েছি জানেন? রক্ত মন্দির। কী বুঝলেন?”
“রক্তমন্দিরে রোজ নরবলি হত।”
“রাইট। একটা মন্দিরের সূর্যদেবতার রক্তের তেষ্টা ছিল নাকি সবচেয়ে বেশি। যতক্ষণ না তেষ্টা মিটত, ততক্ষণ জ্বলজ্বল করত না একটা রক্তমুখী নীলা। তেষ্টা মিটলেই দপদপ করে দুবার ভেতরে জ্বলে উঠত লালরশ্মি। তেষ্টা পাওয়ার আগে জ্বলত একবার।”
“অদ্ভুত গল্প! কেউ দেখেছে?”
“হা হা! আমিও দেখিনি, তবে কিউরেটর যখন বলল, সেই মন্দিরের রক্তলোভী নীলা তার দখলে এসেছে, তখন কিনেই ফেললাম।”
“সঙ্গে নিয়ে এলেন? কাস্টম্স কিছু বলল না?” ভেতরের রাগ কথার মধ্যে গোপন রাখতে পারিনি। ভদ্রলোক ভয়ানক সবজান্তা। আর একদফা অট্টহেসে জহর দাস সামনের নিচু টেবিল থেকে মস্ত একটা টোবাকো পাইপ তুলে নিয়ে বললেন, “এর মধ্যে ছিল রক্তমুখী নীলা। জানতেই পারেনি।”
পাইপ-ভক্ত ইন্দ্রনাথ হাত বাড়িয়ে বলল, “দিন তো দেখি! কোথায় লুকিয়ে রেখেছিলেন?”
“এই তো এইখানে,” বলেই, পাইপের যে-ফোকরে তামাক ঠাসা হয়, সেটা পেঁচিয়ে খুলে ফেললেন জহর দাশ। খুলে এল কিন্তু আধখানা, বাকি আধখানায় রয়েছে ছোট্ট একটা গর্ত, আধ ইঞ্চির মতো ব্যাস। বললেন মুচকি হেসে, “দামি পাথর আনতেই হয়, কী আর করি বলুন, রক্তমুখী নীলা এসেছিল্রে ভেতরে।”
“এখন তিনি কোথায়?”
“রক্তমুখী নীলা? দেখতে সাধ হচ্ছে? চলুন। আমার রুচির কথা বলছিলাম না? একটাই সেই রুচি, চলুন।”
দেখছিলাম আশ্চর্য মৎসধার। মোটা কাচের বিশাল চৌবাচ্চা। তার ম্যেধ খেলে বেড়াচ্ছে বড়-বড় রঙিন মাছ। তাদের অনেকের চোখের পাতা উঠছে আর নামছে। চোখ জ্বলছে ওপর থেকে ফোকাস-করা সারি সারি আলোয়।
“কী বুঝলেন?” জহর দাশের এই এক সবজান্তা উক্তি। হাড় জ্বলে যায়। চুপ করে রইলাম।ইন্দ্রনাথ কিন্তু তন্ময় হয়ে তাকিয়ে ছিল, বলল- “কলের সাছ আনিয়েছেন জাপান থেকে?”
“এই না হলে সার ইন্দ্রনাথ!” চোখ নাচালেন জহর দাশ। নিজেও যেন একটু নেচে নিলেন, “ধরলেন কী করে?”
“মাছেরা কি চোখ পিটপিট করে? করে না। রিমোট কন্ট্রোলার নিশ্চয় আপনার পকেটেই আছে। হাতটা কাইন্ডলি বের করবেন?”
“হা হা হা! ঠিক ধরেছেন। লেখক বন্তু কিন্তু ধরতে পারেননি,” বলতে-বলতে পাঞ্জাবির পকেট থেকে হাত বের করে রিমোট বের করে দেখালেন জহর দাশ।
“শাবাশ!” ইন্দ্রনাথের কথা যেন এখন নেচে নেচে ছুটছে, “এবারের ধাঁধা: জ্যান্ত মাছেদের ভিড়ে কলের মাছ কেন? আপনার এক নম্বর পরীক্ষায় যখন পাশ করেছি, দু”নম্বর পরীক্ষার রেজাল্টও বলে দিচ্ছি: কলের মাছেদের চোখে মণি বসিয়ে রখেছেন। কিন্তু কেন?
“সরেস ব্রেন আপনার। ঠিক জায়গায় ঘা মেরেছেন। খুব দামি রত্ন খুব বেশি লুকিয়ে রাখতে নেই, রাখতে চোখের সামনে, তাই আনিয়েছি কলের মাছ।”
“রক্তমুখী নীলা কার চোখে?”
“আয়... আয়... আয়...!” বলতে বলতে রিমোট টিপে গেলেন জহর দাশ। লেজ নেড়ে নেড়ে কাচের ওদিকে এসে গেল প্রায় আধহাত লম্বা একটা রামধনু রঙিন মাছ- ওর একটা চোখে রক্তমুখী নীলা। যাঃ! লেজের ঝাপটা মেরে দূরে ছিটকে গেল কলের মাছ।
আমার দিকে তাকিয়ে বিচ্ছিরি হাসলেন জহরত ব্যবসায়ী, “লেখক বন্ধুকে আমার আর একটা রুচির কথা বলে রাখি। - শুনছেন?”
“হাঁ, শুনছি“বলতে হলে আমাকে।
“আমিও লেখক।”
“তাই নাকি?”
“তবে আপনার মতো লেখা ছাপিয়ে বেড়াই না, জমিয়ে রেখেছি, সেরা লেখাটাই সে ছাই এখনও লেখা হল না, কোথায় বেসে লিখব জানেন? জেলখানায়।...”
“জেলখানায় বসে লিখবেন?”
“আজ্ঞে। ‘ডন কুইক্সোট’ লেখা হয়েছিল জেলখানায়। সার ওয়াল্টার রলে, ভেলতেয়ার ও হেনরি, বার্ট্রান্ড রাসেল - এরা সকলেই ভাল ভাল লেখাগুলো, কোথায় বসে লিখেছিলেন? জেলখানায়। হিটলার তাঁর আত্মজীবনী ‘আমার সংগ্রাম’এর প্রথম পর্ব কোথায় বসে ডিকটেট করেছিলেন? জেলখানায়, জওহরলাল নেহরেু উত্তম গ্রন্থ রচনা করেছেন জেলখানায়। হা হা! আমিও চাই আমার সেরা লেখা জেলখানায় বসে লিখতে।”
সারা মুখে উপহাসের হাসি ছড়িয়ে কথা শেষ করলেন জহর দাশ। এখনও তিনি হাত বুলোচ্ছেন রিমোট কন্ট্রোলারে। বাইরে গম্ভীর ডেকে উঠল একটা কুকুর। একবার... দু’বার... তিনবার। তারপর সব চুপ। চৌবাচ্চার দিক থেকে এতক্ষণ চোখ সরায়নি ইন্দ্রনাথ। এখন আচমকা বলল, “সত্যিই জেলখানায় যেতে চান?”
“সত্যি! মাথায় ব্যামো আছে ভাবছেন?...
“তা একটু আছে। নইলে নিজের হিরে এইভাবে কেউ লোপাট করে?”
“চোখ নাচালেন জহর দাশ,“ তাই নাকি? কীভাবে করলাম, সার ইন্দ্রনাথ?”
“রোলিং শাটার নামানোর ঠিক আগে হিরের বকলস সমেত আরও হিরে নিজেই সরিয়ে নিয়েছিলেন।”
“বটে! বটে!”
“রোলিং শাটার যখন নামানো হয়েছে, তখন শোকেসের বেশিরভাগ হিরেই ছিল আপনার পকেটে। হিরেচোর শুধু কাচ ভেঙেছে, হাত গলিয়েছে, তারপর ছুটেছে। সে আপনার লোক। তাকে হিরে নিতে কেউ দেখেনি, আপনি নাকি দেখেছেন। জহর দাশ, চোর আপনি নিজে - হিরের বকলসের মালিককে বোকা বানাতে সরিয়েছেন, হয়তো রেখেছেন কলের মাছেদের চোখের সকেটে, জেলখানায় যাওয়ার সাধ কি আছে এখনও?”
সে কী হাসি জহর দাশের, “কক্ষনো না। সেরা লেখা মাথায় থাকুক। ওটা আমার সূত্র, দেখছিলাম, আপনার মগজ কতটা ধারালো। ইয়েস সার ইন্দ্রনাথ, সমস্ত হিরে রয়েছে কলের মাছেদের চোখে, আপনার চোখের সামনেই। হা হা হা!”
“রক্তমুখী নীল দেখাতে ডেকে েএনেছিলাম তো একই মতলবে- আমার সঙ্গেও চোর-পুলিশ খেলবার জন্য। ফলে জানলাম, কুকর্মে ঝোঁক রয়েছে আপনার। অভনব পন্থায় হিরে চুরিই বা করবেন না কেন?
“খেলেছিলাম তো বটেই, এ বড় মজার খেলা! এ যুগের বড়লোকি খেলা। আমার পূর্ব পুরুষেরা যদি বেড়ালের বিয়ে দিয়ে টাকা উড়িয়ে মজা করতে পারে, আমি আমরাই হিরে চুরি করে সজা করতে পারি না? আলবত পারি।”
“নিজের হিরে নিয়ে করতে পারেন, পরের হিরে নিয়ে নয়।”
“হিরের বকলস? আপনিও পারেননি বের করতে, পারলেই ফেরত পাবেন।”
“কুকুর ডাকছে কোথায়?”
ফের চোখ নাচালেন জহর দাশ। নিজেও যেন নাচলেন- “দেখবার সাধ হয়েছে? আসুন! আসুন! এই তো পাশের ঘরে।”
মৎস্যাধার কক্ষ থেকে বেরনোর আগে চৌবাচ্চার সেই নকল মাছটার দিকে ফিরে চেয়ে ছিলাম। আবার লেজ নাড়ছিল এদিককার কাঁচের গায়ে। রক্তমুখী নীলা চোখ ফেরানো ছিল আমার দিকেই। মেন হল যেন, দপ করে লাল রশ্মি ঠিকরে এল নীলার ভেতর থেকে। চোখের ভুল নিশ্চয়। ভয়ে চোটে কিন্তু হাত পা ঠান্ডা হয়ে এল আমার। পাশের ঘরের এককোণে দেখলাম বিশাল কুকুরটাকে। ছোট বাছুরের সাইজ। লকলক করছে জিভ। টপটপ করে ঝরছে লালা। ধক ধক করছে দুই চোখ।
পাগলা কুকুর নাকি? সভয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম চৌকাঠে। গলায় যখন শেকল নেই, ও কুকুরের কাছে আমি যাচ্ছি না। চমৎকার চোখে চেয়ে ছিল ইন্দ্রনাথ। পায়ে পায়ে ইগিয়ে গিয়ে হাত বুলিয়ে নিল কুকুরটার গলার চামড়ার বকলসে। বলল, “চামড়ার পাটির নিচেই রয়েছে হিরের বকলস।”
ঠিক এই সময় বিকট হাঁক পাড়ল বিরাট কুকুর। চার দেয়াল যেন চৌচির হয়ে গেল সেই ডাকে। বিরক্ত গলায় বলল ইন্দ্রনাথ, “কী মজা হচ্ছে? হাত সরান রিমোট থেকে।”
অপরাধী মুখে যন্ত্রটা পকেটে রেখে দু’হাত ঝড়াতে ঝড়াতে বললেন জহর দাশ, “ব্রেন বটে আপনার! খেলে আরাম আছে আপনার সঙ্গে। কলের কুকুরকেও ধরে ফেললেন?”
তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বলল ইন্দ্রনাথ, “এর জন্য ব্রেনের দরকার হয় না, চোর মহারাজ। কলের ডাইনোসর যখন তৈরী হচ্ছে, কুকুর কেন হবে না?”
“হো হো হো! হা হা হা! খুব রগুড়ে লোক মশাই আপনি, ইয়ে, সার ইন্দ্রনাথ।”
“বাকি রগড় দেখাবেন জেলখানায়, সেরা লেখাটিও নিখবেন।”
“পাগল! পুলিশকে জানিয়ে দেবেন, সব হিরে পাওয়া গেছে। কীভাবে? সে একটা গল্প এই লেখক বন্ধু লিখে দেবেন’খন। আংটিগুলো? এই তো আমার ট্যাকে। আবার আসবেন। আরও বুদ্ধির লেখা আমি জানি। হা হা গা! হো হো হো! হি হি হি!”
শক্ত গলায় ইন্দ্রনাথ বলল, “জহর দাশ, রক্তমুখী নীলা বিদেয় করুন।”
“কেন, সার ইন্দ্রনাথ?”
“অভিশপ্ত পাথর আপনার মাথা খারাপ করে দিয়েছে।”
জহর দাশ দাঁত খিঁচোলেন এবং পকেটে হাত পুরলেন। কুুকুরটা ডেকে উঠল এবং খচমচ করে তেড়ে এল, দুই চোখ দিয়ে ঠিকরে এল লেসার স্পার্ক।
আমরা পালিয়ে এলাম
**সমাপ্ত**
ABOUTME
শিশু কিশোররাই আগামী দিনের ভবিষ্যত। তাদের জন্য কিছু রেখে যেতে হবে এটাই আমার কর্তব্য। আর এই কর্তব্যজ্ঞান থেকেই আমার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। বাংলা ভাষা শিশুদের অনলাইন ভিত্তিক শিক্ষার সুযোগ নেই বললেই চলে। কিন্তু যুগের সাথে তাল মিলিয়ে উন্নত শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার জন্য ইন্টারনেট ছাড়া কোন পথ নেই। আমি চেষ্টা করেছি শিশুদের উপযুক্ত শিক্ষার জন্য একটি উন্নত অনলাইন ভিত্তিক তথ্যভান্ডরের অবকাঠামো তৈরী করার। যদি আমার এই প্রচেষ্টা থেকে বাংলাদেশের একটি শিশুও উপকৃত হয় তবে আমার কর্ম স্বার্থক হয়েছে বলে মনে করব।
0 comments:
Post a Comment