স্বাগতম

শিশু-কিশোরদের জগতে

ক্লাসের পড়া

বয়স ভিত্তিক পড়া

বিজ্ঞান পড়া

যেমন খুশি তেমন পড়া

ইংরেজি শেখা

রম্য: তোতা কাহিনী সৈয়দ মুজতবা আলী

ইরান দেশের এক সওদাগরের ছিল একটি ভারতীয় তোতা। সে তোতা জ্ঞানে বৃহস্পতি, রসে কালিদাস, সৌন্দর্যে রুডলফ ভালেন্টিনা, পান্ডিত্যে ম্যাক্সম্যুলার। সদাগর তাই ফুরসৎ পেলেই সে তোতার সঙ্গে দুদন্ড রসালাপ, তত্ত্বালোচনা করে নিতেন।

হঠাৎ একদিন সদাগর খবর পেলেন ভারতবর্ষে কার্পেট বিক্রি হচ্ছে আক্রাদরে। তখনই মনস্থির করে ফেললেন ভারতে যাবেন কার্পেট বেচতে। যোগাড়-যন্ত্র তদ্দন্ডেই হয়ে গেল। সবশেষ গোষ্ঠীকুটুমকে জিজ্ঞেস করলেন, কার জন্য হিন্দুস্থান থেকে কি সওদা নিয়ে আসবেন। তোতাও বাদ পড়লো না-তাকেও শুধালেন সে কি সওগাত চায়। তোতা বললে, “হুজুর, যদিও আপনার সঙ্গে আমার বেরাদরি, ইযারগিরি বহু বৎসরের, তবু খাঁচা থেকে মুক্তি চায় না কোন চিড়িয়া? হিন্দুস্থানে আমার জাতভাই কারোর সঙ্গে যদি দেখা হয়, তবে আমার এ অবস্থার বর্ণনা করে মুক্তির উপায়টা জেনে নিবেন কি? আর তার প্রতিকূল ব্যবস্থাও যখন আপনি করতে পারবেন, তখন এ-সওগাতটা চাওয়া তো অন্যায় কিছু নয়।’


সদাগর ভারতবর্ষে এসে মেলা পয়সা কামালেন, সব সওগাতও কেনা হল, কিন্তু তোতার সওগাতের কথা গেলেন বেবাক ভুলে। মনে পড়ল হঠাৎ একদিন বনের ভিতর দিয়ে যাবার সময় একঝাঁক তোতা পাখি দেখে। তক্ষনি তাদের দিকে তাকিয়ে বললেন,“তোমাদের এক বেরাদর ইরান দেশের খাঁচায় বন্ধ হয়ে দিন কাটাচ্ছে। তার মুক্তির উপায় বলে দিতে পারো?” কোন পাখিই খেয়াল করল না সদাগরের কথার দিকে। শুধু দুঃসংবাদটা একটা পাকির বুকে এমনি বাজ হানল যে, সে তৎক্ষণাৎ মরে গিয়ে মাটিতে পড়ে গেল। সদাগর বিস্তর আপসোস করলেন নিরীহ একটা পাখিকে বেমক্কা বদ-খবর দিয়ে মেরে ফেলার জন্যে। স্থির করলেন, এ মূর্খামি দুবার করবেন না। মনে মনে নিজের গালে ঠাস-ঠাস করে মারলেন গন্ডা দুই চড়।

বাড়ি ফিরে সাদগর সওগাত বিলোলেন দরাজ হাতে। সবাই খুশি, নিশ্চয়ই ‘জয় হিন্দ’ বলেছিল ব্যাটা বাচ্চা সবাই। শুধু তোতা গেল ফাঁকি। সদাগর আর ও-ঘরে যান না পাছে তোতা তাঁকে পায়ে ধরে সওগাতের জন্য। উঁহু সেটি হচ্ছে না ও-খবরটা যে করেই হোক চেপে যেতে হবে।

কিন্তু হলে কি হয়- গোঁপ কামানোর পরও হাত ওঠে অজান্তে চাড়া দেবার জন্য, বে-খেয়ালে গিয়ে ঢুকে পড়েছেন হঠাৎ একদিন তোতার ঘরে। আর যাবে কোথায়-‘অস্‌-সালাম আলাই কুম ও রহমৎ উল্লাহি ও বরকত ওহু আসুন আসুন, আসতে আজ্ঞে হোক। হুজুরের আগমন শুভ হোক’ ইত্যাদি ইত্যাদি, তোতা চেঁচাল।

সদাগর হেঁ হেঁ করে গেলেন। মনে মনে বললেন, খেয়েছে।
তোতা আর ঘুঘু এক জিনিস নয় জানি, কিন্তু এ তো ঘুঘু। বললে,“হুজুর সওগাত?”
সদাগর কাঁটা বাঁশের মধ্যিখানে। বলতেও পারেন না, চাপতেও পারেন না। তোতা এমনভাবে সদাগরের দিকে তাকায় যে তিনি বেইমাস্য বেইমান। সওগাতের ওয়াদা দিয়ে গড্‌ ড্যাম্‌ ফক্কিকারি! মানুষ জানোয়ারটা, এই রকমই হয় বটে! তওবা, তওবা!

কি আর করেন সদাগর। কথা রাখতেই হয়। দুম করে বলে ফেললেন।
যেই না বলা তোতাটি ধপ করে পড়ে মরে গেল। তার একটা বেরাদর সেই দূর হিন্দুস্তানে তার দুরবস্থার খবর পেয়ে হার্ট
ফেল করে মারা গেল, এরকম একটা প্রাণঘাতী দুঃসংবাদ শুনলে কার না কলিজা ফেটে যায়?

দিলের দোস্ত তোতাটি মারা যাওয়ায় সদাগর তো হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন। ‘হায় হায়, কী বে-আক্কেল আমি। একই ভুল দু-বার করলুম।’ পাগলের মত মাথা থাবড়ান সদাগর। কিন্তু তখন আর আপসোস ফায়দা নেই। ঘোড়া চুরির পর আর আস্তাবলে তালা মেরে কি লভ্য! সদাগর চোখের জল মুছতে মুছতে খাঁচা খুলে বের করে আঙ্গিনায় ছুঁড়ে ফেললেন।

তখন কী আশ্চর্য, কী কেরামতি! ফুরুৎ করে তোতা উড়ে বসল গিয়ে বাড়ির ছাদে। সদাগর তাজ্জব- হাঁ করে তাকিয়ে রইলেন তোতার দিকে। অনেকক্ষণ পরে সম্বিতে ফিরে শুধালেন,“মানে”

তোতা এবারে প্যাঁচার মতো গম্ভীর কন্ঠে বললো, ‘হিন্দুস্তানে যে তোতা আমার বদ্‌নসিবের খবর পেয়ে মারা যায়, সে কিন্তু আসলে মরে নি। মরার ভান করে আমার খবর পাঠালো, আমিও যদি মরার ভান করি, তবে খাঁচা থেকে মুক্তি পাবো।’

সদাগর মাথা নিচু করে বললেন,‘বুঝেছি, কিন্তু বন্ধু যাবার আগে আমাকে শেষ তত্ত্ব বলে যাও। আর তো তোমাকে পাব না।’

তোতা বললে,“মরার আগেই মরতে পারো, তবেই মোক্ষ লাভ। মড়ার ক্ষুধা নেই, তৃষ্ণা নেই, মান-অপমান বোধ নেই। সে তখন মুক্ত, সে নির্বাণ মোক্ষ সবই পেয়ে গিয়েছে। মরার আগে মরবার চেষ্টা করো।”

Share this:

ABOUTME

শিশু কিশোররাই আগামী দিনের ভবিষ্যত। তাদের জন্য কিছু রেখে যেতে হবে এটাই আমার কর্তব্য। আর এই কর্তব্যজ্ঞান থেকেই আমার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। বাংলা ভাষা শিশুদের অনলাইন ভিত্তিক শিক্ষার সুযোগ নেই বললেই চলে। কিন্তু যুগের সাথে তাল মিলিয়ে উন্নত শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার জন্য ইন্টারনেট ছাড়া কোন পথ নেই। আমি চেষ্টা করেছি শিশুদের উপযুক্ত শিক্ষার জন্য একটি উন্নত অনলাইন ভিত্তিক তথ্যভান্ডরের অবকাঠামো তৈরী করার। যদি আমার এই প্রচেষ্টা থেকে বাংলাদেশের একটি শিশুও উপকৃত হয় তবে আমার কর্ম স্বার্থক হয়েছে বলে মনে করব।

JOIN CONVERSATION

    Blogger Comment
    Facebook Comment

0 comments:

Post a Comment