ছেলেবেলায় আমি কবিতা লিখতুম, আর আত্মীয়রা আমায় তিরষ্কার করতেন, বন্ধুরা ঠাট্টা করতেন, মাস্টারমশায় প্রহার দিতেন এবং কাগজের সম্পাদকেরা না ছেপে ফেরত দিতেন। কিন্তু বলে রাখি, একদিন সমূহ বিপদ থেকে যে আমার প্রাণ রক্ষা হয়েছিল, সে শুধু ঐ কবিশক্তির জোরে। তোমরা আশ্চর্য হচ্ছ, কবিতা আমার প্রাণ রক্ষা করল কি ক? সত্যি বলছি, সেদিন কারো সাধ্য ছিল না যে, মরনাপন্ন আমাকে রক্ষা করে“ ভাগ্যে কিবতা লিখতে শিখেছিলুম, তাই বেঁচে গেলুম। নইলে লোকের অত্যাচারে কবিতা-লক্ষীকে বাল্য বয়সে বিদায় দিলে, সেদিন আমার যে কি অবস্থা হতো, তা আমি জানি।
গল্পটা তাহলেও খুলেই বলি। নানা স্থান ঘুরে আমি যাচ্ছিলুম জয়পুর থেকে দিল্লী। টাইম টেবিল খুলে দেখলুম টানা দিল্লী যেতে হলে রাত্রের গাড়িটাই সুবিধে। কিন্তু সে ট্রেন অনেক রাতে ছাড়ে- প্রায় দুটো। একে জয়পুরের মত জায়গা, তাও মাঘ মাসের শীত, তার উপর রাত্রী দুটো--এই ত্রাহ্যস্পর্শ ঘাড়ে নিয়ে ষ্টেশন মাস্টারকে বল্লুম--“কি উপায় করা যায়, বলুন তো দেখি? এই দারুন শীতে ভোর রাত্রে বিছানা ছেড়ে উঠে ট্রেন ধরবার কথা মনে করতেই তো আমার কম্প দিয়ে জ্বর আসছে!”
ষ্টেশন-মাষ্টার জিজ্ঞাসা করলেন--“আপনি কি ফাষ্টক্লাস প্যাসেঞ্জার?”
তখন বড়দিনের ছুটিতে রেল কম্পাণী আধাভাড়ায় সর্বত্র যাতায়াতের ব্যবন্থা করায় আমি সস্তায় বড় মানুষী করছিলুুম। বুক ফুলিয়ে বল্লুম--“হ্যাঁ, আমার ফাষ্ট-ক্লাসের টিকিট।”
ষ্টেশন মাষ্টার বললেন--“প্রথমে শ্রেনীর যাত্রীদের জন্যে খুব ভালো একটা ব্যবস্থা আছে।”
আমি বল্লুম- কি?
তিনি বললেন- “আপনি এক কাজ করবেন। সন্ধা আটটার মধ্যে খেয়ে দেয়ে ষ্টেশনে আসবেন। আপনার জন্য একটা ফাষ্ট-ক্লাস গাড়ি ঐ সাইডিঙে কেটে রেখে দেবো, আপনি তাইতে বিছানা পেতে শুয়ে পড়বেন- লেপ মুড়ি দিয়ে। তারপর রাত্রে মেল আসবে, তাইতে আপনার গাড়ি লাগিয়ে দেবো-আপনি দিব্যি ঘুমতে ঘুমতে দিল্লী গিয়ে পৌছবেন।”
আমি বল্লুম- “বাঃ এ তো বেশ!”
ষ্টেশন মাস্টার বললেন--“হ্যাঁ, শীতের রাতে গাড়ি ধরবার অসুবিধে বলেই তো কোম্পাণী বড়-লোক যাত্রীদের জন্যে এই ব্যবস্থা করেছেন।”
আমি বললাম-- “খুব ভাল ব্যবস্থা । আমি তাহলে আটটার মধ্যেই আসবো--আপনি গাড়ি ঠিক করে রাখবেন।”
তিনি বললেন--“গাড়ি ঠিক থাকবে। কিন্তু আপনি দেরি করবেন না। আটটার পর আর ট্রেন নেই বলে আমরা আটটার সময় ষ্টেশন বন্ধ করে চলে যাই।”
আমি বললাম, --“আমি আটটার মধ্যেই আসবো।” বলে আমি চলে গেলুম।
(চলবে)
ABOUTME
শিশু কিশোররাই আগামী দিনের ভবিষ্যত। তাদের জন্য কিছু রেখে যেতে হবে এটাই আমার কর্তব্য। আর এই কর্তব্যজ্ঞান থেকেই আমার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। বাংলা ভাষা শিশুদের অনলাইন ভিত্তিক শিক্ষার সুযোগ নেই বললেই চলে। কিন্তু যুগের সাথে তাল মিলিয়ে উন্নত শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার জন্য ইন্টারনেট ছাড়া কোন পথ নেই। আমি চেষ্টা করেছি শিশুদের উপযুক্ত শিক্ষার জন্য একটি উন্নত অনলাইন ভিত্তিক তথ্যভান্ডরের অবকাঠামো তৈরী করার। যদি আমার এই প্রচেষ্টা থেকে বাংলাদেশের একটি শিশুও উপকৃত হয় তবে আমার কর্ম স্বার্থক হয়েছে বলে মনে করব।
0 comments:
Post a Comment