স্বাগতম

শিশু-কিশোরদের জগতে

ক্লাসের পড়া

বয়স ভিত্তিক পড়া

বিজ্ঞান পড়া

যেমন খুশি তেমন পড়া

ইংরেজি শেখা

দুধ পিঠার গাছ- আহমেদ ফারুক

গল্পটা সত্যিই অদ্ভুত। ইবু কানা দাদুর কাছ থেকে গল্পটা শুনেছিল। 
গ্রামের এক রাখাল পিঠা খাচ্ছিল। হঠাৎ সে কি মনে করে একটা পিঠা মাটিতে লাগিয়ে দিল। তারপর দিন সে দেখল পিঠার গাছ হয়েছে। আস্তে আস্তে পিঠার গাছ বড় হয়। রাখাল পিঠার গাছে উঠে পিঠা খায়। সেই গাছের নিচে একদিন পিঠা খেতে এলো এক ডায়নি বুড়ি। তার দাঁত ছিল তরমুজের বীজের মতো গল্পের এই অংশে কানা দাদু তার কালো দাঁত দেখায়। 
ইবু, পলাশ আর রফিক কতবার যে এ গল্পটা শুনেছে তার ঠিক নেই। পলাশ আর রফিক গল্পটা বিশ্বাস করত। কিন্তু ইবু এসব একদম বিশ্বাস করত না।
একদিন পলাশ আর রফিক বাড়ির পেছনে পিঠে লাগিয়ে দিল। তেলের পিঠের গাছ। দুজনে রোজ সকাল বিকেল পানি দেয়। দুদিন পর চারা গজাল। ওরা দুজন সে কী খুশি! 
ইবু পিঠে লাগালে গাছ হয় এ গল্পটা বিশ্বাস করত না। কিন্তু তার চোখের সামনেই হন হন করে একটা গাছ বড় হচ্ছে। কী মারাত্মক! কী মারাত্মক! 

রফিক দাঁত উল্টিয়ে বলল, ‘পিঠা যখন ধরবে তখন দেখবি, আমি আর পলাশ খাব। তোকে দেব না।’ 
পলাশ খিল খিল করে হাসে। বলে, ‘তারপর একদিন ডায়নি বুড়ি আসবে। গল্পের রাখালটা বোকা ছিল। ডায়নি বুড়িকে পিঠা খেতে দেয় না।। তাই ডাইনি বুড়ি ওকে ভেড়া বানিয়ে দেয়। কিন্তু আমরা ডাইনি বুড়িকে পিঠা খেতে দেব।’ 
ইবু চুপ করে শোনে। তার বিশ্বাসে ফাটল ধরে। পিঠা লাগালে গাছ হয়। এটা তার মনে একটু একটু গেথে যায়। রফিক বলে, ‘ডাইনি বুড়িকে আমরা বাসায় নিয়ে যাব। ওকে গেমস খেলতে দেব। ও খুশি হবে। তারপর আমরা ভাব জমিয়ে রাক্ষসপুরীতে যাব। অনেক হীরে-জহরত আনব। আর আনব ডানাকাটা একটা লালপরী আর একটা নীল পরী।’ 
‘একটা জাদুর বাক্সও আনব। সেই বাক্সে আমাদের বয়স বন্দী থাকবে। আমরা কখনো বুড়ো হব না। আর তুই তো বুড়ো হয়ে যাবি। তোর চুলে পাক ধরবে। তোর দাঁত পড়ে যাবে। কানাদাদুর মতো দাঁত কালো হয়ে যাবে। ’পলাশ বলে। 
ইবু মনে মনে ভয় পায়। সেও কেন তাদের সঙ্গে থাকল না। তাহলে তো তার বয়সটাও জাদুর বাক্সে বন্দী থাকত। 

দুই 

পিঠের গাছটা বেশ বড় হয়েছে। প্রায় তিনফুট। ইবু গভীর রাতে চুপি চুপি পিঠের গাছটার নিচে দাড়াল। কেমন প্যাচাঁনো গাছটা। দূর থেকে দেখলে সাপ মনে হয়। সে গাছটা ধরে একটানে তুলে ফেলল। তারপর দে দৌড়। 

তিন

পিঠের গাছটা মরে যাওয়ার রফিকের কিছু হয়নি। কিন্তু পলাশের আজ তিনদিন ধরে জ্বর। চারবার বমি করেছে। কাদঁতে ওর চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে। ইবু মুখ কাচুমাচু করে ওর কাছে গেল। 
পলাশ বিছানায় শুয়ে দিল। তাকে দেখেই মুখ ফিরিয়ে নিল। ইবু বলল, ‘বন্ধু, শোন। আমি জানি পিঠে গাছ লাগালে কখনো গাছ হয় না। রাক্ষস, লালপরী, নীলপরী আছে এসব আমি বিশ্বাস করি না। তারপরও তোদের গাছটা দেখে বিশ্বাস হয়েছিল।’ 
‘তুই আমার সাথে কথা বলবি না।’ ফুপিয়ে ফুপিয়ে বলল পলাশ। 
‘এই যে এদিকে দেখ।’ 
ইবু একটা পিঠা দেখাল। তারপর বলল, ‘তোর জন্য এনেছি। আয় দু’জনে মিলে লাগাই। আবার পিঠার গাছ হবে। কি বলিস?’ 
পলাশ কিছু বলল না। ফোকলা দাঁত বের করে হাসল।

[লেখাটি পাঠিয়েছেন: গোলাম মওলা আকাশ]

Share this:

ABOUTME

শিশু কিশোররাই আগামী দিনের ভবিষ্যত। তাদের জন্য কিছু রেখে যেতে হবে এটাই আমার কর্তব্য। আর এই কর্তব্যজ্ঞান থেকেই আমার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। বাংলা ভাষা শিশুদের অনলাইন ভিত্তিক শিক্ষার সুযোগ নেই বললেই চলে। কিন্তু যুগের সাথে তাল মিলিয়ে উন্নত শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার জন্য ইন্টারনেট ছাড়া কোন পথ নেই। আমি চেষ্টা করেছি শিশুদের উপযুক্ত শিক্ষার জন্য একটি উন্নত অনলাইন ভিত্তিক তথ্যভান্ডরের অবকাঠামো তৈরী করার। যদি আমার এই প্রচেষ্টা থেকে বাংলাদেশের একটি শিশুও উপকৃত হয় তবে আমার কর্ম স্বার্থক হয়েছে বলে মনে করব।

JOIN CONVERSATION

    Blogger Comment
    Facebook Comment

0 comments:

Post a Comment