স্বাগতম

শিশু-কিশোরদের জগতে

ক্লাসের পড়া

বয়স ভিত্তিক পড়া

বিজ্ঞান পড়া

যেমন খুশি তেমন পড়া

ইংরেজি শেখা

উড়ন্ত ক্যাঙ্গারু অস্ট্রেলিয়ার উপকথা

কত্তো---দিন আগের কথা, সে আর মনে নেই; তবে পৃথিবী তখন কিছুদিন হল তৈরী হয়েছে। একদিন উঠল এক বিশাল ঝড়, জল-স্থলের উপর দিয়ে প্রচণ্ডবেগে ধেয়ে গেল। এতো রেগে ছিল ঝড়টা যে তার পথে যা কিছুই পড়ল, সব কিছুকেই নির্দয়ভাবে ধ্বংস করে দিল সে। কেউ কেউ বলল, এরা হল ঊনপঞ্চাশ পবনের ছেলেপুলের দল যারা সর্বদাই প্রকৃতির নিয়মের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে চায়; আবার কেউ বলল, না না, এ হল কুচুটে উত্তুরে হাওয়া, যারা সর্বদাই তাদের দক্ষিণী শান্ত তুতো-ভাইদের হিংসা করত, তাদেরই শক্তিপ্রদর্শনের নমুনা।

কিন্তু যে গল্পটাই ঠিক হোক না কেন, আসল ঘটনা হল অনেকদিন ধরেই ঝড়ের গর্জন চলতে লাগল; সকলেই খুব জ্বালাতন হচ্ছিল। তারা সাগরের জল ঝাঁকিয়ে বিরাট ফেনার চূড়ো তৈরী করে ফেলল, স্থলভূমিকে ঘেঁটে এমন বানাল যে বড় বড় গাছ থেকে শুরু করে ঘাস পর্যন্ত পথে শুয়ে পড়ল। যে সব গাছেরা নত হতে চাইছিল না, তাদের এই কঠোর ঝড় শিকড় শুদ্ধ উপড়ে ফেলে হিঁচড়ে টেনে নিয়ে গেল। 

মানুষজন ঝড়ের প্রচণ্ডতায় ভীত হয়ে মাটির তলায় লুকাল আর এর পরেই যে শান্ত অবস্থা আসবে বলে তারা নিশ্চিত ছিল তার জন্য অপেক্ষা করতে লাগল। কিন্তু কেউ কেউ ছিল যারা নিজেদের তাদের বন্ধুদের থেকে চালাক মনে করত, তারা এই তাণ্ডবমুখর দৃশ্যগুলি বেশ উপভোগ করছিল। তাই তারা সমুদ্রের তীর বরাবর গুহাগুলিতে আশ্রয় নিল যাতে তারা প্রকৃতির এই হিংস্র লড়াই ভালভাবে দেখতে পারে।


এভাবেই আদিম অধিবাসীদের একটা দল যারা অস্ট্রেলিয়ার উত্তর সমুদ্রতীরের পাহাড়ে লুকিয়েছিল, তারা প্রথম ক্যাঙ্গারুর দর্শন পেলো। প্রথম দেখায় মনে হয়েছিল, এটাও বোধহয় উপড়ে পরা গাছপালারই আরেকটা টুকরো যেটা পাক খাওয়া জঞ্জালের সঙ্গে মেঘের মত তাদের তীরের দিকে এগিয়ে আসছিল। কিন্তু একটা ব্যাপার এটাকে এই উড়ে আসা বস্তুগুলি থেকে আলাদা করেছিল। সবাই লক্ষ্য করল, জিনিষটা নড়ছে বটে তবে ঝড়ের খেয়ালখুশি মত নয়। এর বোধহয় প্রাণ আছে। সাহসী ছোট্ট প্রাণীটি মাটিতে পৌঁছানোর জন্য প্রাণপনে লড়াই করছে – এই ব্যাপারটা সেই দর্শকদের কাছে বেশ মজার মনে হচ্ছিল। অনেকক্ষণ ধরে চেষ্টা করে যদিবা সে মাটিতে পা রাখে, সঙ্গে সঙ্গে আরেকটা দমকা হাওয়া তাকে আবার উড়িয়ে নিয়ে যায়।


যে লোকগুলি এতক্ষণ ধরে পুঁচকে প্রাণীটিকে পর্যবেক্ষণ করছিল, তাদের মনে হল প্রত্যেকবার প্রচণ্ড কষ্ট করে সে যেই মাটিতে পা রাখছে, অমনি যেন তার পা-টা একটু একটু করে লম্বা, আরো লম্বা হয়ে যাচ্ছে। যখন তারা প্রাণীটিকে আরো কাছে এবং আরো স্পষ্ট করে দেখতে পেল। তারা দেখল যে প্রাণীটি দেখতে কুৎসিত এবং জবুথবু মতন। এর মাথাটা ও সামনের পা’দুটো (যেটাকে ওর হাতও বলা যায়) ছোট, লম্বা একটা লেজ আছে, আর মনে হচ্ছে যেন পা-টা যতদূর পারা যায় টেনে টেনে চলছে। তবে দেখতে বিদ্ঘুটে আর ভালোবাসবার মত না হলেও একটা কথা সকলেই তারিফ না করে পারল না যে ছোট্টো প্রাণীটির যুঝবার শক্তি আছে বটে! এতো ঝড়-ঝঞ্ঝার মধ্যেও সে কিছুতেই হার মানবে না।


অবশেষে সমস্ত দর্শকদের অনুচ্চারিত সেই ইচ্ছার জবাবেই যেন প্রাণীটির একটা পা বিরাট বিরাট পাথরের খাঁজে গজানো শক্তপোক্ত এক ঝোপের উপর আটকে গেল। ঝোড়ো বাতাস জোরে জোরে ধাক্কা দিতে লাগল, তাকে টেনে নিয়ে যেতে চাইল, যেন শিকারকে সে কিছুতেই ছাড়বে না, ধরে রাখবেই। আর প্রাণীটিও তার শেষ উপায়কে কিছুতেই ছাড়বে না, এইভাবে নাছোড়বান্দার মত ঝোপটাকে আঁকড়ে রইল। শেষপর্যন্ত ঝড়ের ফোঁসফোসানি হার মানতে বাধ্য হল। শেষবারের মত গরগর করে প্রতিবাদ জানিয়ে ঝড়টা নিভে গেল। সমুদ্র আবার তার রোজকার জোয়ার-ভাঁটার ছন্দে ফিরে গেল। শুধু স্থলভূমি জেগে রইল এক বিধ্বংসী ঘটনার সাক্ষী হয়ে। 
যে লোকেরা এতক্ষণ ধরে পাথরের আড়ালে বসে ঝড়ের তাণ্ডব দেখছিল, তারা এখন একে একে বের হল আর সবাই মিলে ঠিক করল, এই যে আজব প্রাণীটিকে নিয়ে ঝড় এতক্ষণ ধরে তাদেরই সমুদ্রতীরে গুলিডান্ডা খেলছিল, তার একটু খোঁজ নিতে হবে। কিন্তু প্রাণীটি এতক্ষণ ধরে ঝড়ের হাতে বন্দী হয়ে ছিল। এখন সে আর নিজের স্বাধীনতা খোয়াতে রাজী হলনা। যেই না মানুষরা তাকে ধরতে এলো, সে সামনের ঘাসেভরা সমতলের উপর দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে গেল। তবে একটা কথা, সে কিন্তু তোমার আমার মত করে দৌড়ায় নি। ওইরকম একটা বিদ্ঘুটে বেঢপ শরীর নিয়ে সে এত দ্রুতগতিতে লাফিয়ে লাফিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেল যে মানুষের চোখ তো ছানাবড়া। তারা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল।


তখন থেকে সবাই জানল যে ক্যাঙ্গারু হল অস্ট্রেলিয়ায় সমস্ত জন্তু-জানোয়ারের মধ্যে সবচেয়ে বড় এবং দ্রুতগতিসম্পন্ন। এহেন প্রাণীকেও আদিবাসীরা ধরে বন্দী করতে পেরেছিল, তবে সে অন্য আরেক গল্প।

Share this:

ABOUTME

শিশু কিশোররাই আগামী দিনের ভবিষ্যত। তাদের জন্য কিছু রেখে যেতে হবে এটাই আমার কর্তব্য। আর এই কর্তব্যজ্ঞান থেকেই আমার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। বাংলা ভাষা শিশুদের অনলাইন ভিত্তিক শিক্ষার সুযোগ নেই বললেই চলে। কিন্তু যুগের সাথে তাল মিলিয়ে উন্নত শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার জন্য ইন্টারনেট ছাড়া কোন পথ নেই। আমি চেষ্টা করেছি শিশুদের উপযুক্ত শিক্ষার জন্য একটি উন্নত অনলাইন ভিত্তিক তথ্যভান্ডরের অবকাঠামো তৈরী করার। যদি আমার এই প্রচেষ্টা থেকে বাংলাদেশের একটি শিশুও উপকৃত হয় তবে আমার কর্ম স্বার্থক হয়েছে বলে মনে করব।

JOIN CONVERSATION

    Blogger Comment
    Facebook Comment

0 comments:

Post a Comment