স্বাগতম

শিশু-কিশোরদের জগতে

ক্লাসের পড়া

বয়স ভিত্তিক পড়া

বিজ্ঞান পড়া

যেমন খুশি তেমন পড়া

ইংরেজি শেখা

আকাশ বাড়ি কেনিয়ার রূপকথা


অনেক অনেক দিন আগের কথা। আফ্রিকার এক গ্রামে বাস করত এক গরিব লোক। তার নাম ছিল আবু নুভাস। সে ছিল যেমন বুদ্ধিমান কেমনি রসিক। প্রায়ই তার গাঁয়ের ধনী লোকদের নিয়ে সে মজা করত। এ ব্যাপারে গাঁয়ের কোন ধনী ব্যক্তিই তাকে পছন্দ করত না। তারা আবুকে এতটাই অপছন্দ করত যে তাকে মেরে ফেলারও ফন্দি আঁটত, মেরে ফেলতেও চাইত।


একদিন গাঁয়ের মোড়ল আবু নাভাসকে তার বাড়িতে ডেকে পাঠালেন। আবু নুভাস এলে তিনি বললেন, “আমি শুনেছি তুমি নাকি খুবই বুদ্ধিমান আবু! তা তুমি কি আমার জন্য তিন দিনের মধ্যে আকাশে একটি বাড়ি বানিয়ে দিতে পারবে? এর জন্য তোমার যত লোক দরকার আমি দেব কিন্তু যদি তুমি কাজটা না করতে পার তাহলে আমার সৈন্যরা তোমাকে মেরে ফেলবে।”

“বাড়িটা আমি তৈরী করে দেব মোড়ল মশাই, “ এই কথা বলে আবু তার নিজের বাড়ি ফিরে গেল। বাড়ি ফিরে সমস্যা সমাধানের জন্য আবু ভাবতে লাগল। অনেক চিন্তা ভাবনা করে এরপর সে একটা বিশাল ঘুড়ি বানিয়ে তার সাথে একটা ঘন্টা আটকিয়ে দিল আর ঘুড়িটাকে একটা লম্বা শক্ত দড়ি দিয়ে বেঁধে উড়িয়ে দিল। বাতাসের বেগের সাথে সাথে ঘুড়িও আকাশের উঁচুতে উড়তে লাগল। ঘুড়িটা উড়ে অন্যদিকে চলে যেতে বা হারিয়ে যেতে পারছিল না। কারণ ঘুড়ির দড়ির আরেক মাথা আবু একটা মোটা গাছের সাথে বেঁধে রেখেছিল।

পরের দিন গাঁয়ের লোকেরা ঘন্টার টুং টাং আওয়াজ শুনতে পেল আর আকাশে একটা কালো বিন্দু দেখতে পেল। মোড়ল মশাই কালো বিন্দুটাকে দেখতে পেলেন। একটু বাদে আবু তার কাছে এসে বলল, “মোড়ল মশাই” আকাশের বাড়িটা শীঘ্রই তৈরী হয়ে যাবে। আপনি ঘন্টার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছেন? আকাশের বাড়িটিতে যে সব শ্রমিক কাজ করছে তারাই ওই আওয়াজ করছে। এখন ঘরের মেঝেটা তৈরী করার জন্য তাদের কিছু কাঠের তক্তা চাই। দয়া করে আপনি আপনার সৈন্যদের বলুন যে তারা যেন আকাশে গিয়ে তক্তাগুলো শ্রমিকদের দিয়ে আসে।”
“কিন্তু আমার সৈন্যরা আকাশে পৌঁছবে কী করে? রাগত স্বারে প্রশ্ন করলেন মোড়ল।
“ওহ, একটা রাস্তা আছে ওপরে পৌছবার,” জবাব দিল আবু।
কি আর করার, অবশেষে বাধ্য হয়ে মোড়ল মশাই তার সৈন্যদের কিছু কাঠের তক্তা দিয়ে আবুর পেছন পেছন যাবার জন্য আদেশ দিলেন। তারা সকলে এসে সেই গাছটার কাছে দাঁড়াল আর দড়িটা দেখতে পেল।
“এটাই আকাশে যাবার রাস্তা”, আবু সৈন্যদের বলল। “এটা বেয়ে উঠতে থাকো, কিছুক্ষণের মধ্যেই তোমরা আকাশে পৌছে যাবে।”
সৈন্যরা দড়ি বেয়ে ওপরে ওঠার জন্য বার বার চেষ্টা করতে লাগল কিন্তু কিছুতেই সফল হতে পারল না।
“চেষ্টা কর, আবার চেষ্টা কর! আমাদের মোড়ল মশাই খুবই রাগ করবেন যদি তোমরা এই কাঠের তক্তাগুলো তার আকাশের বাড়িতে পৌছে দিতে না পার।” ধমকের সুরে বলল আবু।
কিন্তু বার বার চেষ্টা করেও ব্যার্থ হয়ে সৈন্যরা মোড়লের কাছে গিয়ে কাঁদো কাঁদো স্বরে জানল, “মান্যবর, কোন মানুষের পক্ষেই আকাশে ওঠা সম্ভব নয়!”
সমস্ত ব্যাপারটা শুনে মোড়ল  মশাই কিছুক্ষণ ভাবলেন এবং তারপর বললেন, “ঠিকই তো, কোন মানুষের পক্ষেই এটা সম্ভব নয়।”

তখন আবু একটু হেসে মোড়লকে বলল,“তা, মোড়ল মশাই আপনি যখন এটা বোঝেনই তাহলে কেন আমাকে আপনার জন্য আকাশে একটা বাড়ি বানাতে বলেছিলেন?”
এই প্রশ্নের কোন জবাব মোড়ল দিতে পারলেন না। অতগুলো সৈন্য আর সমস্ত গ্রামবাসীর সামনে লজ্জায় তাঁর মাথা হেঁট হয়ে গেল আর দ্রুত সেই স্থান ত্যাগ করলেন। তখন আবু যে গাছটায় ঘুড়ির দড়িটা বাঁধা ছিল সেখানে দিয়ে দড়িটা কেটে দিল আর দেখতে দেখতে ঘুড়িটা নীল আকাশের মেঘের মধ্যে হারিয়ে গেল।



Share this:

ABOUTME

শিশু কিশোররাই আগামী দিনের ভবিষ্যত। তাদের জন্য কিছু রেখে যেতে হবে এটাই আমার কর্তব্য। আর এই কর্তব্যজ্ঞান থেকেই আমার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। বাংলা ভাষা শিশুদের অনলাইন ভিত্তিক শিক্ষার সুযোগ নেই বললেই চলে। কিন্তু যুগের সাথে তাল মিলিয়ে উন্নত শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার জন্য ইন্টারনেট ছাড়া কোন পথ নেই। আমি চেষ্টা করেছি শিশুদের উপযুক্ত শিক্ষার জন্য একটি উন্নত অনলাইন ভিত্তিক তথ্যভান্ডরের অবকাঠামো তৈরী করার। যদি আমার এই প্রচেষ্টা থেকে বাংলাদেশের একটি শিশুও উপকৃত হয় তবে আমার কর্ম স্বার্থক হয়েছে বলে মনে করব।

JOIN CONVERSATION

    Blogger Comment
    Facebook Comment

0 comments:

Post a Comment