স্বাগতম

শিশু-কিশোরদের জগতে

ক্লাসের পড়া

বয়স ভিত্তিক পড়া

বিজ্ঞান পড়া

যেমন খুশি তেমন পড়া

ইংরেজি শেখা

গোপাল নেপালে লড়াই

বর্দ্ধমানের রাজসভাতেও এক ভাঁড় ছিল। নাম তার নেপাল। সে সকলের কাছে বলত- গোপালের চাইতে তার বুদ্ধি অনেক বেশি, গোপালকে একবার সামনে পেলে সে তাকে বোকা বানিয়ে দিতে পারে কি না পারে, দেখা যাবে একবার। দৈবক্রমে একসময়ে গোপাল মহারাজের দরবার থেকে বর্দ্ধমান রাজসভায় গিয়ে উপস্থিত।

বর্দ্ধমান রাজ যখন শুনলেন গোপাল এসেছে, তখন তিনি খুশি হয়ে বললেন, তুমি এসেছ, বড় ভাল হয়েছে। আমার ভাঁড়টি সর্বদাই তোমার সঙ্গে প্রতিযোগীতা করবার ইচ্ছা প্রকাশ করে থাকে। এবার প্রমাণ হবে- সে বড়, না তুমি বড়। প্রতিযোগীতায় তুমি আমার-ভাঁড়কে হারাকে পারলে আশাতীত পুরষ্কার পাবে। নেপালের সঙ্গে এটে উঠতে পার কিনা দেখি। সে জিতলে সেও পাবে।

গোপাল ঈষৎ হেসে বললে, হুকুম করুন, কি করতে হবে।

রাজা বিচারের ভার দিলেন মহামন্ত্রীর উপর। বিজ্ঞ মহামন্ত্রী গোপাল এবং বর্দ্ধমানের ভাঁড় নেপাল দুজনকে ডেকে বললেন, তোমরা প্রত্যেকেই তিনজন করে লোক সংগ্রহ করবে ও তাদের কাল সকালে রাজসভায় হাজির করবে। ওই তিনজনের ভিতর একজন হবে দরিয়ার এ পারের লোক, একজন ওপারের , আর একজন মাঝ দরিয়ার লোক।

যে আজ্ঞে। বলে গোপাল এবং বর্দ্ধমানের ভাঁড় নেপাল দুজনেই বিদায় নিলে।

নেপাল ভাবল এবার আমি গোপালকে ঠকাবই ঠকাব, সে মুচকি হেসে নাচতে নাচতে বিদায় নিল। নেপাল পরদিন ভোরে নদির ঘাটে গেল। সেখানে দাঁড়িয়ে নদির এপার থেকে একজন, নদির ওপার থেকে একজন এবং মাঝনদীর নৌকার উপরে থেকে একজন লোককে ডেকে আনলে রাজার নাম করে এবং তাদের সভায় এনে হাজির করলে। তিনজন লোকত ভয়ে অস্থির। আমরা কোন দোষ করিনি বাবু, আমাদের কেন রাজসভায় নিয়ে এলেন। আমাদের কি দোষ ধরে নিয়ে এলো?

গোপালও যথাসময়ে রাজসভায় এসে হাজির হলো, তারও সঙ্গে তিনজন লোক, একজন তার ভিতর ভটচাজ ঠাকুর, একজন সন্ন্যাসী, একজন নারী। তাদের নিয়ে সে সভার একপাশে চুপ করে বসে রইল।

বর্দ্ধমানের ভাঁড় রাজা ও মন্ত্রীকে সন্বোধন করে বললে, হুকুমমত আমি এই তিনজন লোককে এনে হাজির করেছি। প্রথম লোকটি ছিল নদীর এপারে, দ্বিতীয় লোকটি ছিল নদীর ওপারে, এই তৃতীয় লোকটি মাঝ নদীতে নৌকার ওপরে ছিল। যদি বিশ্বাস না হয় এদেরকে জিজ্ঞসা করে দেখুন আমি সত্যি বলছি, না মিথ্যা বলছি ওরাই সে কথা বলবে।

তারপর গোপালকে বলা হল, সে যাদের এনেছে তাদেরকে সামনে উপস্থিত করার জন্য। গোপাল জানাল এদেরকে বহুকষ্টে অনুনয় বিনয় করে রাজসভায় উপস্থিত সে করেছে। কেউই প্রথমে রাজসভায় আসতে চায়নি। বিশেষ করে সন্ন্যাসী ঠাকুর কোনমতেই রাজসভায় আসতে নারাজ গোপালের কথাবর্তায় সন্তুষ্ট হয়ে উনি রাজি হয়েছেন। পরিচয় দেবার জন্যে গোপাল করষোড়ে নিবেদন করলেন, মহান মহারাজ। মহামান্য মহামন্ত্রী এবং সভাসদগণ। এই যে তিনজনকে আমি রাজসভায় নিয়ে এসেছি, এরা কেউ আজ দরিয়া বা নদীর দিকে যান নি। কারণ আমার মনে হয়নি যে সুবিজ্ঞ মহামন্ত্রী দরিয়া বা নদী অর্থে বলতে সামনের গঙ্গানদী বুঝিয়েছেন। আমি অন্তত মহামন্ত্রীর নদি অর্থে এখানে বুঝেছি-ভব নদি। আমার অনুমান অভ্রান্ত মনে করে তাই এপার ওপার ও মধ্যস্থানের এক একটি লোক এনে রাজসভায় বহুকষ্টে হাজির করেছি…. এই যে ভট্চাজ্ ঠাকুর ইনি চাইছেন কি করে দেশে এর পান্ডিত্যের খ্যাতি দিনদিন ছড়িয়ে পড়বে, কি করে বেশ দুপয়সা উপার্জ্জন হবে, কি করে যশে মানে ধনে ইনি দেশও দশের ভিতরে একজন মহামান্য হয়ে উঠতে পারবেন। সম্পূর্ণভাবে ইহকাল নিয়েই ইনি ব্যস্ত আছেন। এক কথায় বলা যায় ইনি এ পারের লোক। এ পারের লোক এ ধরণের ছাড়া আমার অন্য কাউকে মনে হয় না। ….. আর এই যে সন্ন্যাসী ঠাকুর, ইনি ইহকাল নিয়ে মাথা ঘামান না মোটেই। সর্বদাই ভগবানের ধ্যানে-বিভোর কি করে ভগবান দর্শন করবেন সেই নিয়ে তন্ময়, খেতে দিন খাবে খেতে না দিন খাবে না, সুতরাং এদেরকেই বলা যায়, ও পারের লোক। …. আর এই যে, তৃতীয়টি, ও হল এই নগরের একটি বেশ্যা। বেশ্যা হইকালের কথাও ভাবে না, পরকালের কথাও ভাবে না। সে ইহকাল-পরকাল বলতে কিছুই বোঝে না। সে এপারের লোকও নয়, ওপারের লোকও নয়। অর্থাৎ সে মাঝ নদির লোক। এই আমার তিনজন লোকের পরিচয়। মহামন্ত্রীর আদেশমত কাজ করতে পেরেছি কিনা, এইবার সভাতা যাচাই করুন। আমার আর এর বেশি কিছুই বলার নেই। আপনারা সকলেই ভেবে বিচার করে দেখুন। ঠিক হয়েছে কিনা। সেটা আপনাদের উপর ছেড়ে দিলাম।

সভায় ধন্য ধন্য রব উঠল। রাজা মহামন্ত্রী বললেন, গোপালের মত বুদ্ধিমান লোক ভাড়েদের ভেতর দূরের কথা বড় বড় পন্ডিত সমাজে দুর্লভ। নেপালেরও অহঙ্কার সেদিন থেকে দূরে গেল। রাজা এবার গোপালকে প্রচুর পুরষ্কার সহ বিদায় দিলেন। গোপাল শুধু সুরদিক ভাঁড় নয় শুভ বুদ্ধিসম্পন্ন মহাপন্ডিতও বটে- দিকে দিকে তার এই গুনের কাহিনী ঘোষিত হল। কৃষ্ণনগরে মহারাজ ও গোপালের এই কাহিনীগুলোর গুনের কদর করতে ভুললেন না। সেদিন থেকে নেপাল গোপালের বন্ধু হয়ে গেল।

Share this:

ABOUTME

শিশু কিশোররাই আগামী দিনের ভবিষ্যত। তাদের জন্য কিছু রেখে যেতে হবে এটাই আমার কর্তব্য। আর এই কর্তব্যজ্ঞান থেকেই আমার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। বাংলা ভাষা শিশুদের অনলাইন ভিত্তিক শিক্ষার সুযোগ নেই বললেই চলে। কিন্তু যুগের সাথে তাল মিলিয়ে উন্নত শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার জন্য ইন্টারনেট ছাড়া কোন পথ নেই। আমি চেষ্টা করেছি শিশুদের উপযুক্ত শিক্ষার জন্য একটি উন্নত অনলাইন ভিত্তিক তথ্যভান্ডরের অবকাঠামো তৈরী করার। যদি আমার এই প্রচেষ্টা থেকে বাংলাদেশের একটি শিশুও উপকৃত হয় তবে আমার কর্ম স্বার্থক হয়েছে বলে মনে করব।

JOIN CONVERSATION

    Blogger Comment
    Facebook Comment

0 comments:

Post a Comment