স্বাগতম

শিশু-কিশোরদের জগতে

ক্লাসের পড়া

বয়স ভিত্তিক পড়া

বিজ্ঞান পড়া

যেমন খুশি তেমন পড়া

ইংরেজি শেখা

উল্কা বৃষ্টি

হঠাৎ দেখা গেল রাতের আকাশে একটা ছোট আলোর বিন্দু টুপ করে নিচের দিকে পড়ে গেল। মনে হলো, যেন আকাশভরা মিটমিটে তারাগুলো থেকে একটা বুঝি টুপ করে পড়ে গেল। কিন্তু আসল ঘটনা হচ্ছে, এই ‘খসে পড়া তারা’গুলি আদতে তারাই নয়। এদের নাম উল্কা।
এই উল্কা জিনিসটা আসলে কী? উল্কাবৃষ্টিই বা কেন হয়? আর কেনই বা উল্কাদের খসে পড়া তারাদের মতো দেখায়?
প্রথমে আসা যাক উল্কা কী, সে প্রশ্নে। যে সব বস্ত মহাকাশে ঘুরে বেড়ায়, তাদেরকে বলে মহাজাগতিক বস্তু। এ রকম কোনো মহাজাগতিক বস্ত পৃথিবীর খুব কাছে এসে পড়লে পৃথিবীর মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রের প্রভাবে বস্তুটি ভূ-পৃষ্ঠের দিকে তীব্র বেগে এগোতে থাকে। তখন এর সঙ্গে বায়ুমণ্ডলের কণাগুলোর সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষ-ঘর্ষণের ফলে বস্তুটি জ্বলে ওঠে। তখন যে ক্ষণস্থায়ী সরু আলোর রেখা দেখা যায়, সেটাই উল্কা। বেশিরভাগ সময় উল্কার আকার এতো ছোট হয় যে, এটি ভূ-পৃষ্ঠে আসতে আসতেই জ্বলে ছাই হয়ে যায়।
তবে যদি বস্তুটি মোটামুটি বড় আকারের হয়, তখন সেটি পুরোপুরি পুরোপুরি পুড়ে ছাই হয়ে যায় না। বস্তুটির অবশিষ্টাংশ ভূ-পৃষ্ঠে ভীষণ জোরে আছড়ে পড়ে। এই অবশিষ্টাংশকে বলে উল্কাপিণ্ড।
কিন্তু ঠিক কোন্ মহাজাগতিক বস্তু আসে এভাবে? পৃথিবীর চারপাশে শুক্র বা মঙ্গল গ্রহ পর্যন্ত তেমন কিছুই নেই। অথচ শক্তিশালী পর্যবেক্ষণ যন্ত্রে প্রতি ঘণ্টায় গড়ে ৫টি উল্কাপাত দেখা যায়। প্রশ্ন হচ্ছে, এই মহাজাগতিক বস্তুগুলো আসে কোত্থেকে?

সৌরজগতের সবচেয়ে ছোট সদস্য গ্রহাণু। এই গ্রহাণুগুলো পৃথিবী থেকে বেশ দূরে অবস্থান করে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে। এগুলো ছাড়াও মহাশূন্যে অসংখ্য ছোট ছোট বালুকণা আর পাথরের টুকরোর মতো পদার্থ ইতস্তত ছড়িয়ে আছে। সিংহভাগ উল্কাই এসব কণার মাধ্যমে সৃষ্ঠ। এই কণাগুলো পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে সংঘর্ষে জ্বলে ওঠে। খুব ছোট হওয়ায় এদের কেউ-ই পৃথিবীপৃষ্ঠে পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে না। প্রতি ১০০ বছরে হয়ত কয়েকটি ছোটখাট টুকরো পৃথিবী পর্যন্ত এসে পৌঁছায়। আর বিশাল খাদ কিংবা ডাইনোসরদের বিলুপ্ত করে দেয়ার মতো ধ্বংসযজ্ঞ সৃষ্টিকারী বিশাল উল্কা আসার সম্ভাবনা হিসাব করলে প্রতি ৩ লক্ষ বছরে একবার! এগুলো হলো গ্রহাণু বেল্টের কোনো বিক্ষিপ্ত সদস্যের কাজ, যারা ঘুরতে ঘুরতে মঙ্গল ও পরে পৃথিবীর আকর্ষণে পথ বদলাতে গিয়ে শেষমেশ পৃথিবীর মহাকর্ষ বল এড়াতে না পেরে এখানে আছড়ে পড়ে।
সাধারণত ভোরের দিকে সন্ধ্যার চেয়ে বেশি উল্কা দেখা যায়। কারণ, সে সময় উল্কাদের অবস্থান থাকে পৃথিবীর গতির দিকে। আর খালি চোখে আমরা যে সব উল্কা দেখি সেগুলো প্রায় ৮০-১০০ কিলোমিটার উপরে থাকে। আর এদের বেগ থাকে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৩০ কিলোমিটার।
এ তো গেল ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়া উল্কাদের কথা। এখন আসা যাক উল্কাবৃষ্টির বিষয়ে। প্রতি বছরই কিছু নির্দিষ্ট দিনে আকাশে উল্কার পরিমাণ বেশ বেড়ে যায়। ঘণ্টায় ৩০-৪০টা উল্কাও দেখা যায়। একেই বলে উল্কাবৃষ্টি।
এই অসংখ্য উল্কা আকাশের একেকটি নির্দিষ্ট জায়গা থেকেই আসে। এই জায়গাগুলিকে বলে বিকিরণ বিন্দু । এ থেকে মনে হতেই পারে, এগুলো নিশ্চয়ই একই জায়গা থেকে আসছে; আসলেও তাই। এর জন্য প্রায়ই দায়ী থাকে ধূমকেতু। ধূমকেতুর শেষে যে লেজ থাকে, সেটা মূলত বরফকণাপূর্ণ গ্যাসীয় পদার্থে তৈরি। ধূমকেতু যখন সূর্যের খুব কাছে চলে যায়, তখন এই লেজের কিছু অংশ খসে যায়। এই অবশিষ্টাংশ এদের কক্ষপথের আশেপাশে ছড়িয়ে থাকে। চলার পথে পৃথিবীর কাছে চলে এলে কাছাকাছি অঞ্চলের টুকরোগুলো উল্কা হয়ে পৃথিবীর দিকে ঝাঁক বেঁধে ছুটে আসে। এভাবেই উল্কাবৃষ্টির সৃষ্টি হয়।
যে নির্দিষ্ট বিন্দু থেকে উল্কাবৃষ্টি হয়, সেগুলো থাকে একেকটি তারা মণ্ডলের মধ্যে। তাই অবস্থান শনাক্তকরণ সহজ করতে একেকটি উল্কাবৃষ্টি যে তারামণ্ডলের পটভূমিতে হয়, সেই তারামণ্ডলের নামানুষারে উল্কাবৃষ্টির নামকরণ করা হয়। তবে তারামণ্ডলের নামের শেষে সাধারণত রফং অথবা হরফং যোগ করা হয়।
অনেক সময় তারামণ্ডলের নামের শেষের দু-একটা বর্ণও বাদ দেয়া হয়। যেমন. আগস্টের ১২ তারিখে যে উল্কাবৃষ্টি দেখা যায় তার নাম ‘পারসেইডস’ । এই উল্কাবৃষ্টির নামকরণ করা হয়েছে পারসিয়াস তারামণ্ডল থেকে। উল্কাবৃষ্টিটি হয়েছিল ‘সুইফট টাটল’ নামক ধূমকেতুর অবশিষ্টাংশ থেকে।
আবার অক্টোবর মাসের ২০ তারিখে দেখা যায় ‘ওরায়নিডস’ নামক উল্কাবৃষ্টি। এটির নামকরণ করা হয়েছিল কালপুরুষ তারামণ্ডল থেকে। উল্কাবৃষ্টিটি হয়েছিল হ্যালির ধূমকেতুর অবশিষ্টাংশ থেকে।
এই দিনগুলিতে বা তার একদিন আগে-পরের দিনগুলোতে রাতের আকাশে প্রতি ঘণ্টায় গড়ে ৩০-৪০টা উল্কা চোখে পড়ে। যদি কমও দেখা যায়, তবু অন্তত ৫-১০টা উল্কা চোখে পড়বেই। অনেক সময় একসঙ্গে কয়েকটাও দেখা যেতে পারে। তবে আমাদের রাজধানী ঢাকার মতো আলো-দূষণময় শহরগুলোতে অবশ্য এ নিয়ম খাটে না। এই ধরনের শহরে এতো উল্কা দেখা যায় না।

Share this:

ABOUTME

শিশু কিশোররাই আগামী দিনের ভবিষ্যত। তাদের জন্য কিছু রেখে যেতে হবে এটাই আমার কর্তব্য। আর এই কর্তব্যজ্ঞান থেকেই আমার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। বাংলা ভাষা শিশুদের অনলাইন ভিত্তিক শিক্ষার সুযোগ নেই বললেই চলে। কিন্তু যুগের সাথে তাল মিলিয়ে উন্নত শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার জন্য ইন্টারনেট ছাড়া কোন পথ নেই। আমি চেষ্টা করেছি শিশুদের উপযুক্ত শিক্ষার জন্য একটি উন্নত অনলাইন ভিত্তিক তথ্যভান্ডরের অবকাঠামো তৈরী করার। যদি আমার এই প্রচেষ্টা থেকে বাংলাদেশের একটি শিশুও উপকৃত হয় তবে আমার কর্ম স্বার্থক হয়েছে বলে মনে করব।

JOIN CONVERSATION

    Blogger Comment
    Facebook Comment

0 comments:

Post a Comment